
প্রকাশিত: Thu, Jul 13, 2023 3:43 PM আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 3:36 AM
একটি কৌটোর আলেখ্য
ড. সেলিম জাহান : আমাদের সময়ের সবারই চিরচেনা ছবির এ কৌটোটি, রবিনসন বার্লির কৌটো। প্রতি কৌটোতে নীট আধা পাউন্ড বা এক পোয়া বার্লি থাকতো। শক্ত সোনালী ঢাকনাযুক্ত লাল-নীলের এ কৌটোর ওপরে লাল অক্ষরে ইংরেজিতে লেখা থাকতো রবিনসন পেটেন্ট বার্লি। ইংল্যান্ডের এলেন রবিনসন কোম্পানি লিমিডেট এ বার্লির প্রস্তুতকারক। নীচে ডানদিকে এলেন রবিনসনের স্বাক্ষর থাকতো প্রতিটি কৌটোয় এবং এর কারখানা ছিলো লন্ডনে। শৈশব-কৈশোরে খেয়াল করিনি, কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি যে কৌটোর ওপরে লেখা আছে, ঋড়ৎ ওহভধহঃং ধহফ ওহাধষরফং. সহজেই বুঝতে পারি, কেন ‘ওহভধহঃং’ কথাটি বলা হয়েছে। শিশুদের জন্যে এটা একটা সহজপাচ্য খাবার। কিন্তু ‘ওহাধষরফং’? এখানে আসলে রহাধষরফং শব্দটি রোগে ‘শয্যাযায়ীদের’ বোঝানো হয়েছে, প্রতিবন্ধীদের নয়। এও এক আবিষ্কার।
আমাদের প্রজন্মের মানুষ, কিন্তু রবিনসন বার্লি খায়নি, এমনটা খুঁজে পাওয়া যাবে না। দুধে বা জলে জ্বাল দেয়া বলকানো সাদা রঙ্গের বার্লির স্বাদ ছিলো এক কথায় অখাদ্য, আমরা খেতেই চাইতাম না ও জিনিষ। জ্বর হলেই আমাদের খাওয়ানো হতো দিনের নানান সময়ে এক বাটি বার্লি। সে বার্লিকে সুস্বাদু করার জন্যে আমার জননী তাতে একটু লেবু চিপে দিতেন, একটু লবন এবং গোলমরিচ, কিন্তু কিসের কি? ওই বার্লি পেটে পড়া মাত্র সব বিবমিষা উগরে উঠতো। জ্বরে দ্ধু-সাবুরও চল ছিলো, খেতেও বেশ ছিলো। কিন্তু আমাদের মায়েরা কেন জানি বার্লিকেই অদ্বিতীয় সহজপাচ্য শক্তিদায়ক পথ্য বলে মনে করতেন। তা’ কি আর করা যাবে? ওই যে অদ্রীশ বর্ধনের ভাষা ‘আমার মা সব জানে’।
আমাদের মা’দের কাছে অত্যন্ত জননন্দিত ছিলো রবিনসন বার্লির কৌটো। বার্লি শেষ হলেই তাঁরা খালি টিন জমিয়ে রাখতেন এবং অচিরে তাঁদের ভাঁড়ারে সারি দেয়া ডজন খানেক রবিনসন বার্লির কৌটো শোভা পেত। সে সব কৌটোর কোনটায় থাকতো মরিচ, কোনটায় রসুন, কোনটায় গরম মশলা। সে সব কৌটো হাতছাড়া করতে চাইতেন না আমাদের মা’য়েরা, যক্ষের ধনের মতো তাঁরা এ গুলো আগলে থাকতেন। পরবর্তী সময়ে, বার্লি শব্দটি আমাদের বাগবিধির অংশ হয়ে গেছে। কোন কায়িক কাজ করতে না পারলে ভর্ৎসনা করা হয়, ‘কি, বার্লি খেয়েছো নাকি’? কিংবা গলা মিন্ মিন্ েহলে একই কথা ‘এ তো বার্লি খেয়েছে মনে হয়’। বার্লিকে তাই দূর্বলতার সমার্থক মনে করা হয়। একটি ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তি দিয়ে শেষ করি। আমার ছোটবেলায় রবিনসন বার্লি খেতেই চাইতাম না। আজ ষাট বছর পরে মায়ের হাতের তৈরি সেই লেবু চেপা, লবন-গোলমরিচ দেয়া জলে গোলা তরল অখাদ্য বস্তুটি খেতে বড় মন চাইছে। মানুষের মন - কতখানিই বা তার বোঝা যায়? লেখক: অর্থনীতিবিদ
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
